মোস্তাক চৌধুরীঃ মৌলভীবাজার জেলার ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সদর উপজেলার হাফিজা খাতুন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে গেল রাত আনুমানিক ৮ ঘটিকার সময় প্রধান শিক্ষিকা রাশেদা বেগমসহ চারজনের একটি দল বিদ্যালয়ে প্রবেশ করে বিদ্যালয়ের দুর্নীতি ও লোটপাটের প্রমান নষ্ট করতে কাগজপত্র রাতের অন্ধকারে নিয়ে চলে যায়। এ ঘটনাকে ঘিরে জেলার সচেতন মহল শিক্ষক শিক্ষিকা ছাত্রী অভিভাবক মহলে তীব্র বিতর্ক ও জনমনে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক রাশেদা বেগমের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতি সেচ্ছাচারীতা, বৈষম্য, অর্থ আত্মসাৎ এর নানা অভিযোগে পৌষে উটেছে জেলা শহর। বিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষিকা ছাত্রী অভিভাবক সচেতন নাগরিক সমাজ প্রধান শিক্ষিকার এহেন দুর্নীতির বিরোদ্ধে সংবাদ সম্মেলন মানববন্ধন জেলা প্রশাসক শিক্ষা অফিসারের নিকট স্মারকলিপি প্রধানসহ নানা কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। মৌলভীবাজার জেলার স্হানীয় ও জাতীয় পত্রিকায় এ নিয়ে সংবাদ প্রকাশ হওয়ায় প্রধান শিক্ষিকা প্রমান নষ্ট করার জন্য রাতে অন্ধকারে স্কুলে ঢুকে এ সকল নথিপত্র নিয়ে যায়।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে জানা গেছে, রাত আনুমানিক ৮টার দিকে প্রধান শিক্ষক রাশেদা বেগম, খন্ডকালীন শিক্ষক আবুল কালামসহ আরও তিনজন স্কুলের মূল ফটক খুলে ভিতরে প্রবেশ করেন। প্রায় এক ঘণ্টা পর তারা বিদ্যালয়ের অফিস কক্ষ থেকে একাধিক কাগজপত্র ও ফাইল নিয়ে বেরিয়ে যান। ঘটনাটি জানাজানি হলে অভিভাবক, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয় এবং তারা দ্রুত তদন্তের দাবি জানান।
জানা যায়, কিছুদিন আগে বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষিকা ও খন্ডকালীন শিক্ষকদের অর্থ আত্মসাৎ, অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা শিক্ষকদের সাথে বৈষম্য এবং ছাত্রীদের শ্লীলতাহানিসহ নানা গটনা জন্মদেন এ শিক্ষিকা। এসব ঘটনার পেক্ষিতে কয়েকদিন পূর্বে শিক্ষক, কর্মচারী ও অভিভাবক পরিষদ প্রধান শিক্ষিকার বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করেন। উক্ত সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন প্রেসক্লাব সভাপতি সরওয়ার আহমেদ। উপস্থিত ছিলেন বিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষিকা ও অভিভাবক ফোরামের নেত্রিবৃন্দ। তারপর মানববন্ধন জেলা প্রশাসক বরাবরে স্মারকলিপি প্রধানসহ নানা কর্মসূচী পালন করছেন প্রধান শিক্ষিকার অপসারণের দাবীতে বিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষিকা ছাত্রী অভিভাবক ও জেলা শহরের সচেতন নাগরিক সমাজ।
এ বিষয়ে সরেজমিনে বিদ্যালয়ে গেলে নৈশপ্রহরী জামাল জানান, আনুমানিক রাত ৮টার দিকে প্রধান শিক্ষিকা রাশেদা বেগম, অফিস সহকারী সুদীপ ভট্টাচার্য্য, পিয়ন দিলীপ বিশ্বাস এবং খণ্ডকালীন শিক্ষক আবুল কালাম বিদ্যালয়ে প্রবেশ করেন প্রথমে প্রধান শিক্ষিকার কক্ষে প্রবেশ করেন, এরপর অফিস সহকারীর কক্ষে প্রবেশ করে বেশ কিছু কাগজ বাইরে গিয়ে ফটোকপি করে আনেন এবং প্রায় ঘণ্টাখানেক কেরানির কক্ষে অবস্থান করে হলুদ রঙের কিছু ফাইল নিয়ে বেরিয়ে যান।
রাতে এর আগে কখনো প্রধান শিক্ষক বা অন্য কোনো কর্মকর্তা বিদ্যালয়ে প্রবেশ করেছেন কিনা জানতে চাইলে নৈশপ্রহরী বলেন, “এটি প্রথমবার। এর আগে শুধু বার্ষিক মিলাদ মাহফিলের সময় একজন ক্রীড়া শিক্ষক ও বাবুর্চি প্রবেশ করেন তাও বছরে একবার ।”বিদ্যালয়ের অনিয়ম-দুর্নীতি সেচ্ছাচারিতা দুর্নীতি অর্থ আত্বসাৎ নিয়ে মামলা, সংবাদ সম্মেলন ও মানববন্ধন চলমান থাকায় প্রমান লোটপাটের জন্য প্রধান শিক্ষিকা এ কান্ড ঘটান। নৈশ্য প্রহরী বলেন প্রধান শিক্ষিকা ও অন্যরা যে গাড়িতে এসেছিলেন, সেই গাড়ির নম্বর ও চালকের মোবাইল নম্বর তিনি সংরক্ষণ করেছেন। এছাড়া তারা যাওয়ার সময় বিদ্যালয়ের ওয়াই-ফাই সংযোগ বন্ধ করে চলে যান।
বিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মচারী ও অভিভাবকরা বিষয়টি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এবং স্বচ্ছ তদন্তের মাধ্যমে প্রধান শিক্ষিকা খন্ডকালীন শিক্ষকসহ এ দুনীতি পরায়নদের বিরোদ্ধে দ্রুত ব্যবস্তা গ্রহনের দাবী জানান উর্ধতন কতৃপক্ষের নিকট। খবর নিয়ে জানাগেছে এ বিদ্যালয়টি জেলার একটি ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীট। দীর্গদিন থেকে এ বিদ্যাপীটে এস,এস,সির মাধ্যমিকের সেন্টার পরীক্ষা চলমান ছিল। এই বছরই প্রথম এ বিদ্যাপীটে মাধ্যমিকের সেন্টার পরীক্ষা হচ্ছে না। প্রধান শিক্ষিকা রাশেদা বেগমের বিরুদ্ধে শিক্ষক, কর্মচারী ও অভিভাবক পরিষদের ব্যাপক অভিযোগ নানা অনিয়ম অবিচার দুর্নীতি অর্থআত্বসাৎ প্রেক্ষিতে এবারে সেন্টার পরীক্ষা থেকে বঞ্চিত হল এ বিদ্যাপীট। প্রধান শিক্ষিকার এহেন কর্মকান্ডে ভেঙে পড়েছে বিদ্যালয়ের পাটদান। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা দুইজন খন্ডকালীন শিক্ষক নিয়েছে তার স্কুলে কিন্তুু তারা স্কুলে কোন ক্লাস নেন না। কোন ক্লাস করানো তাদের কাজ না। একজন প্রধান শিক্ষিকাকে নিয়ে মোটরসাইকেল যোগে ঘুরে বেড়ান। আরেকজন মাঝে মধ্যে স্কুলে আসে প্রধান শিক্ষিকাকে প্ররামর্শ দিতে। তাকে প্রধান শিক্ষিকার পরামর্শ দাতা বলা হয়ে থাকে।
উক্ত বিষয়ে প্রধান শিক্ষিকা রাশেদা বেগমের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোন কথা বলতে রাজি নয়। তিনি মেটোফোনে বক্তব্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। উক্ত বিষয়ে মৌলভীবাজার জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ ফজলুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, বিষয়টি আমার নজরে আসলে সহকারী জেলা শিক্ষা অফিসার এবিএম সাইফুদ্দিন ইয়াহিয়াকে বিদ্যালয়ে যাওয়ার জন্য বলেছি। পরিস্থিতি দেখার জন্য এবং আমাকে রিপোর্ট জানানোর জন্য। আমি বর্তমানে জেলার বাইরে আছি। আমি এসে রিপোর্ট পেলে বিস্তারিত জানতে পারবো এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
Leave a Reply