ব্রেকিং নিউজ :
বিএনপি যদি রাস্ট্র ক্ষমতায় যায় তাহলে আমরা এই পুলিশকে বিএনপির পুলিশ বানাবো না: জি কে গউছ ময়নুল ইসলাম খানের মমতাময়ী মায়ের মৃত্যুেতে মনুকূলের কাগজ পরিবার গভীরভাবে শোকাহত বিএনপি পেছন দিয়ে ক্ষমতায় যাওয়ায় বিশ্বাস করে না: বড়লেখায় ডা: জাহিদ চুরি হওয়া স্বর্ণালংকার, নগদ টাকা ও মালামাল উদ্ধার, গ্রেফতার – ১ কুলাউড়ায় স্ত্রীর বিরুদ্ধে ভিডিও বার্তা দিয়ে ট্রেনের নীচে ঝাঁপ দিয়ে যুবকের আত্মহত্যা সত্যে রাগিনী তুমি-মোস্তাক চৌধুরী অরণ্য ফাউন্ডেশন”-এর উদ্যোগে কাঙ্গালী ভোজ বেগম খালেদা জিয়ার জন্মদিন উপলক্ষে মৌলভীবাজার জেলা বিএনপির দোয়া ও মিলাদ মাহফিল জিপিএ ৫ প্রাপ্ত কৃতি শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের উপহার সামগ্রী বিতরণ
মাওলানা মুহাম্মদ শফিক উদ্দিন রহ. একজন নির্ভিক সংগ্রামীর প্রতিচ্ছবি

মাওলানা মুহাম্মদ শফিক উদ্দিন রহ. একজন নির্ভিক সংগ্রামীর প্রতিচ্ছবি

আল্লাহর জমিনে দ্বীন প্রতিষ্ঠার ধারাবাহিক আন্দোলনের নির্ভিক সংগ্রামী সিপাহসালার খেলাফত মজলিসের সাবেক নায়েবে আমীর, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র মজলিসের প্রতিষ্ঠাকালীন কেন্দ্রীয় সভাপতি মাওলানা মুহাম্মদ শফিক উদ্দিন রহ. এর চিরবিদায়ের ৪ বছর অতিক্রম হচ্ছে  ৩ এপ্রিল।

করোনাকালীন পরিস্থিতিতে ২০২১ সালের ৩ এপ্রিল রাত ২টায় রাজধানীর ইবনে সিনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে থাকা অবস্থায় তিনি ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুর আগে প্রায় ২ সপ্তাহ যাবৎ তিনি প্রথমে পিজি হাসপাতাল ও পরে ইবনে সিনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন।

তাঁর মৃত্যুর সংবাদে সংগঠনের সর্বস্তরের নেতাকর্মী ও আলেম সমাজ ও ইসলামী অঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে আসে। মৃত্যুর খবরে ব্যথিত সবাই। সকাল বেলা তাকে শেষ বারের মত দেখতে ও জানজায় শরিক হতে সেগুন বাগিচায় ছুটে আসেন দেশের প্রায় সকল ইসলামী দলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ ও কর্মীরা।

৩ এপ্রিল সকাল ১০টায় সেগুনবাগিচা জামে মসজিদে জানাজা শেষে মরহুমের লাশ দাফনের উদ্দেশ্যে তাঁর গ্রামের বাড়ী সুনামগঞ্জের ছাতকে নিয়ে যাওয়া হয় এবং জন্মস্থান ছাতক উপজেলার গোবিন্দগঞ্জের দিঘলবাগে পারিবারিক গোরস্তানে চির নিদ্রায় শায়িত হন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৫৯ বছর। তিনি স্ত্রী, ২ ছেলে ১ মেয়ে রেখে যান।

বাংলাদেশে ইসলাম প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের অগ্রগতিতে এবং খেলাফত প্রতিষ্ঠাল লক্ষ্যে উলামায়ে কেরাম ও দ্বীনদার বুদ্ধিজীবিদের সমন্বিত ধারা সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন মাওলানা মুহাম্মদ শফিক উদ্দিন। তিনি বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র মজলিসের প্রতিষ্ঠাকালীন কেন্দ্রীয় সভাপতি ছিলেন। হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব ছিলেন। রাজপথের বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে তিনি সদা সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। তিনি ছাত্রজীবন থেকে শুরু করে মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত বাংলাদেশে খেলাফত প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। বাংলাদেশে ইসলাম প্রতিষ্ঠার ধারাবাহিক আন্দোলনের একজন সক্রিয় ও যোগ্য নেতা, রাজপথে আন্দোলন সংগ্রামের বলিষ্ঠ কন্ঠস্বর ছিলেন মাওলানা মুহাম্মদ শফিক উদ্দিন।

মাওলানা মুহাম্মদ শফিক উদ্দিন ১৯৬২ সালের ১ মার্চ হাওর অধ্যুষিত সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার দিগলবাগ গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম হাফিজ আবদুল কাইউম। পিতা-মাতার ৪র্থ সন্তান মুহাম্মদ শফিক উদ্দিন স্থানীয় শিবনগর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষা জীবন শুরু করেন। পরে স্থানীয় সৎপুর মাদ্রাসা থেকে দাখিল ও আলিম পাশ করেন ও সিলেট আলীয়া মাদ্রাসা থেকে কামিল পাশ করেন। এরপর সিলেট এমসি কলেজে অধ্যয়ন করেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে মাস্টার ডিগ্রি অর্জন করেন।

তিনি স্কুল জীবন থেকেই ইসলামী সংগঠনের কাজে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। ছাত্র সংগঠনে থাকা অবস্থায় সুনামগঞ্জ জেলা, সিলেট জেলা ও কেন্দ্রীয় সংগঠনের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বিশেষ করে ১৯৯০ সালে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র মজলিসের প্রতিষ্ঠাকালীন কেন্দ্রীয় সভাপতি ছিলেন মাওলানা মুহাম্মদ শফিক উদ্দিন। ছাত্র জীবন শেষে তিনি খেলাফত মজলিসের ঢাকা মহানগরীর সভাপতি ও পরে ২০০৫-২০২০ সাল পর্যন্ত খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করেন এবং সর্বশেষ ২০২১ সালে খেলাফত মজলিসের নায়েবে আমীর নির্বাচিত হন।

তিনি হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের সাবেক কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব ছিলেন। দেশের বহু শীর্ষ আলেম যেমন হযরত হাফিজ্জি হুজুর রহ. থেকে শুরু করে শায়খুল হাদীস আল্লামা আজীজুল হক রহ., মাওলানা আবদুল গাফফার রহ.-সহ সর্বশেষ আল্লামা শাহ আহমদ শফি রহ. ও আল্লামা জোনায়েদ বাবুনগরী রহ. পর্যন্ত এদেশের অনেক শীর্ষ উলামাদের সাথে বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামের জীবনে তিনি জেল-জুলুম নির্যাতনের শিকার হন। তিনি ছিলেন একজন সাহসী সংগ্রামী।

মাওলানা মুহাম্মদ শফিক উদ্দিন একজন স্পষ্টবাদী মানুষ ছিলেন। নিয়ম-শৃঙ্খলা সংরক্ষণে বিশেষ করে সাংগঠনিক পরিবেশ সংরক্ষণে তিনি অত্যন্ত কঠোর ছিলেন। যেকোন সংকটকালে, সংকট উত্তরণে তিনি দূরদর্শী ও বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেছেন।

মাওলানা মুহাম্মদ শফিক উদ্দিন পেশাগত জীবনে একজন সফল ব্যবসায়ী ছিলেন। তিনি বার্ড ট্যুরস এন্ড ট্রাভেলেস এর অন্যতম সত্ত্বাধিকারী ছিলেন। এছাড়া রাজধানীতে কাগজ এবং বহুমুখী ব্যবসায়ী ছিলেন। ছাতকের নিজ এলাকায় বিভিন্ন উন্নয়ন ও সমাজসেবামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করেন। পেশাগত ও সাংগঠনিক কারণে তিনি সৌদি আবর, ইরান, যুক্তরাজ্য, সংযুক্ত আরব আমীরাত, মালয়েশিয়া, পাকিস্তান, ভারতসহ বহু দেশ ভ্রমণ করেন।

আল্লাহ তায়ালা মরহুম মাওলানা মুহাম্মদ শফিক উদ্দিনকে জান্নাতের সুউচ্চ মাকাম দান করুন। তাঁর আজীবন লালিত স্বপ্ন-আল্লাহর জমিনে দ্বীন প্রতিষ্ঠার আন্দোলন পৌঁছুক কাঙ্ক্ষিত মঞ্জিলে। আমীন।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




© All rights reserved © Dailymonukulerkagoj.Com
Design & Developed BY Gausul Azam IT